বাংলা
ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১২০
978-984-96304-8-7
কিছুকাল বাদে শুনি, আরজ আলী কী করে যেন, কবিতাটি সংগ্রহ করেছে। আরজ আলী, কবিতাটি টিনের পাতে সেঁটে গলায় ঝুলিয়ে রাখে সর্বক্ষণ। রিকশা চালায়, ভিক্ষা করে, গলায় ঝুলছে ওই কবিতা। বিচলিত হলাম। বিস্মিত, হতভম্ব। লিখলাম দ্বিতীয় কবিতা, আরজ আলীর জন্য, দ্বিতীয় গাথা। আজকাল শুনি কেউ কেউ কবিতাটি আবৃত্তিও করে থাকেন। শ্রোতাদের, কেমন লাগে! জানি না, জ্বালাতে চাই না। তবে, দ্বিতীয় লেখাটিও শুনেছি, স্থান করে নিয়েছিল, আরজ আলীর গলায়, ঝুলে থাকা টিনের পাতে। আরজ আলী, কবরে যাওয়ার সময়, টিনের পাতটিও, কাফনের ভিতর ঢুকিয়ে দিতে, অনুরোধ করেছিল, জনেজনে। হয়তো তাঁরা সজ্জন, ব্যক্তিবান, কথাও রেখেছেন। এই তো সার্থকতা; নিশ্চয়ই সার্থকতা এক ধরনের। কিন্তু কার! কবির, না কবিতার? হয়তো কেউ কেউ বলবেন উভয়েরই। কবির পক্ষে, তখন না মেনে উপায় থাকে না। আমারও থাকেনি।…
…আমার ভাইদের মধ্যে একমাত্র ওর নামটাই, আমার রাখা, নাসের। গামাল আবুল নাসের মিশরের প্রেসিডেন্ট। সুয়েজ খাল রাষ্ট্রীয়করণ করে নিয়েছেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ স্বার্থ ছাড়তে রাজি নয়। সৈন্য পাঠিয়ে দখল করে নিল সুয়েজ। ক্ষোভে ফুঁসে উঠল সারা বিশ্ব। তখনকার নিদারুণ পাকিস্তানও। খুলনা। আমি খুলনা জিলা স্কুলের ছাত্র। ছেলেরা ব্রিটিশবিরোধী মিছিল বের করল। সেই আমার, প্রথমবারের মতো, মিছিলে যোগদান। সমাবেশ শেষে ঘরে ফিরলাম। উদ্বেলিত, উত্তেজিত। অনুপ্রাণিত। রায় দিলাম, সদ্যোজাত ভাইটির নাম হবে অবশ্যই নাসের। মিন্টুর জন্ম খুলনায়। এক দেড় বছর আগে আমাদের একটি ছোটো ভাই মারা যায়। নাম ছিল বাকের। মা, সহ্য করতে পারেনি। শোকে-কষ্টে উন্মাদিনী, প্রায়। পরপর, মিন্টু এল। ওর আগমনে হাসি ফুটল সবার মুখে। মাও ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠল। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা খুঁজে পেল গোটা পরিবার। ৫৬ বছর পর, সেই মিন্টু, আজ আবার, সকলকে ভাসিয়ে দিয়ে গেল। ও তো যায়নি, স্বেচ্ছায়। জোরপূর্বক, ছিনিয়ে নেওয়া হল! কী কষ্ট!