বাংলা
ফেব্রুয়ারি, ২০২১
২০৪
978-984-95398-7-2
কবি চাইলে, বড়ো বেদনায়, আত্মসমর্পণ, চাইলেই কী, যা কিছু চাওয়া যায়, করে ওঠা সম্ভব, কবির পক্ষে, একজীবনে। অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে শব্দ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প, নির্মাণ, কলা-কৌশল, সমগ্র পৃথিবী, এমনকি কবির আপন স্বভাব, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, প্রেম-ভালোবাসা, জীবনযাপন, সৃষ্টি চায় না, নির্মাণ, কখনই পরিপূর্ণতা বা সম্পূর্ণতা, পরিভ্রমণ করুক। এত বিধান, অকাট্য। কবি, অসহায়, হাতড়িয়ে ফিরতে পারেন, যাকে বলি, জনমভর, উৎসর্গ করে দিতে পারেন, একসঙ্গে একটি জীবন দুটি জীবন তিনটি জীবন, তবু অপূর্ণতা, তবু অস্থিরতা। ভিতর থেকে। অক্ষমতাবোধ, রেহাই নেই কবির। অবশেষে যারা পড়ে থাকতে পারেন কবিতার ভিতর, একটি উপমায়, একটি চিত্রকল্পে, একটি শব্দে। খুঁজে ফেরেন এই জনমের পূর্বের পূর্বের পূর্ব জনম। শাশ্বত মানবজনম।
আমি লিখি, লিখতে বাধ্য হই, তাই লিখি। অচিন পাখি, যেভাবে ধরা দেয় খাঁচায়, ঠিক সেই ভাবে, একটি কবিতা, আমার রক্তমাংস হাড়-হাড্ডি ফুঁড়ে দুমড়ে, মুচড়ে, বেরিয়ে আসে। আমার নিশ্বাসে, ছড়িয়ে পড়ে শূন্য সাদা-পৃষ্ঠায়। ক্রমে ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন আকারও পরিভ্রমণ করে। কখনও কখনও, আমি বিস্ময়ে থাকি! অবাক বনে যাই। এ কী হচ্ছে, বা হয়ে উঠছে। আমার কী করার আছে আমি বিস্ময়ে, হতচকিত। একটির শব্দের পর একটি, চিত্রকল্পের সারি, আমাকে দখল করে নেয়। যেন এক বিস্ময় যুদ্ধ জিতে নিয়েছে তারা। আর তারা যদি জিতে যায়। বহু পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তা হলে কবিতাটি দাঁড়ায়, নচেৎ, ভূমিধস, ভূমিকম্প, ছত্রাখান ঘরবাড়ি, বসত-আবাস, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, হাড়-গোড়-কঙ্কাল, কঙ্কালের সারি পথে ঘাটে, একটা কিছু ঘটে। কবি, প্রভাবক মাত্র, মহাবীর, এর বেশি কিছু নয়। আমি, অসহায় দৃষ্টিতে ছেলে-মেয়েগুলির একে একে নিষ্ক্রমণের পথে তাকিয়ে রইলাম। আমি কী করে, ওদের ডেকে বলি, শোনো, ক্ষমা করে দাও, আমি অসহায়। কবিমাত্রই বড়ো অসহায়, কবিতার কাছে।