কলোনি-পরবর্তী রূপান্তরের পিঠে দাঁড়িয়ে সাহিত্যে প্রথমে যে চিহ্নায়ন দরকার- কবিতায়, গদ্যে বা যেকোনও মাধ্যমেই, সেটা হবে নিজস্ব ভাষার উপলব্ধিতে পৌছানো। ফয়েজ আলমের কাব্য জলছাপে লেখার মধ্যে কলোনির প্রভাবে গড়া-ওঠা ভাষার রূপরেখা ভাঙবার অদম্য প্রেরণা। তাঁর কবিতায় বি-উপনিবেশায়ন হয় নিজের চেনা জগতে, কুড়িয়ে আনা নিজের স্বরে ও সুরে। […] চিহ্নায়নের ভেতর সচেতনে রচিত হয় তাঁর কবিতার ভাষা।
তিনি গণমানুষের মুখের ভাষা থেকে নিয়ে একটি নতুন কাব্যভাষা তৈরির চেষ্টা করেন যার মধ্যে জমা রয়ে গেছে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আমাদের ভাব ও সাংস্কৃতিক অর্জনের চিহ্ন। […] তাত্ত্বিক মনোভঙ্গির ধারাক্রমেই যেন তাঁর কবিতা স্বাতন্ত্রিকভাবে পুবেরই কবিতা হয়ে উঠেছে, যে পুবকে ‘আন’ (আদার) অভিধায় নিকৃষ্টতার শামিয়ানার তলে অস্পৃশ্য হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে পশ্চিম। […] তাঁর কবিতায় বাস্তব পরাবাস্তবের আবরণে জড়িয়ে থাকে জাতির অবচেতনের সঞ্চয়ও। […] স্বনির্ভর হওয়ার স্বার্থেই ভাষার নিজস্বতা চিনে নেওয়া এবং নিজ ভাষার মধ্য দিয়ে আপন জগৎ ও অতীত ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের কাল ও চারপাশের জগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটা উত্তর-উপনিবেশী রূপরেখা আমরা ফয়েজ আলমের কবিতায় পাই।
ওয়াহিদ রোকন, প্রান্তস্বর, ফ্রেব্রুয়ারি, ২০২১