সামাজিকভাবে উপেক্ষিত হওয়ার কারণে ঘাটুগান/ঘাটুসংস্কৃতির প্রতি তথাকথিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী গবেষকদের আগ্রহ ছিল না নিকট অতীতেও। অথচ জাতীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ইতিহাসে কবিগানের মতো ঘাটুগানের গুরুত্ব কম নয়। ঘাটুগান ঘাটুসংস্কৃতি গ্রন্থে জফির সেতু মনস¦ী অনুসন্ধিৎসা, পারঙ্গমতা ও নিষ্ঠায় বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির ধারাটিকে উপপাদ্য করেছেন গবেষণার সারস্বত আদলে। ভাষিক ওজস্বিতায় প্রেক্ষাপট ও উদ্ভবপ্রসঙ্গ-সহ এতে উন্মোচিত হয়েছে ঘাটুগানের ভাষা-আঙ্গিক-শ্রেণি- ভাববস্তু ও পরিবেশনরীতি; সর্বোপরি ঘাটুসংস্কৃতির স¦রূপ। ঘাটুনাচ ও ঘাটুগানের অন্তর-বাহির বিবেচনায় গবেষক দেখিয়েছেন যে, লোকসংস্কৃতির এই বিশেষ ধারায় বাঙালির অখণ্ড জাতীয় অনুভ‚তি স্পন্দমান এবং তা জাতীয় নৃত্য-গীতি-সংস্কৃতির একটি অঙ্গও। সমানভাবে ঘাটুসংস্কৃতির ভিতর দিয়ে সামন্তবাদী লোকসমাজের ধরন, লোকমনস্তত্ত¡ এবং জনরুচির পরিচয়ও অনুসন্ধান করেছেন। এমনকি বিলুপ্তির কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে কীভাবে বিলুপ্তপ্রায় এই লোকসংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটানো যায় তারও ইঙ্গিত করেছেন। গ্রন্থটি বাংলা লোকসংগীত ও লোকসংস্কৃতিচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।