স্নিগ্ধমতি আবিদ ফায়সালের বৈদধাজ্যোতি ও মনস্বীপ্রভায় আমরা বারংবার প্রতিবিম্বিত হই। তাঁর মৃদু অথচ ঋজুকণ্ঠ আত্মগহিন উচ্চারণকে সমষ্টিধ্বনির নিরবধি কণ্ঠস্বরের গভীর দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে ‘কথার বাদাম’।
আবিদের নিজস্ব মনন, মননশীল পৃথিবী এবং প্রজ্ঞাঋদ্ধ বিশ্ববীক্ষার সাবলীল উত্থাপন আমাদের চিন্তাস্রোতের জঙ্গমস্বভাবকেই কেবল আন্দোলিত করে না-জগৎচেতনার আপাতঅবরুদ্ধ অর্গলগুলিতেও ঝঞ্ঝাঘাত করে। আবিদ ফায়সাল কথার বাদাম ভাঙতে গিয়ে সমকাল-মানব-কথন এবং সমাজ- সংসার-বিধৌত প্রাণপুঞ্জের অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গের পরিকাঠামো মুক্তগদ্যের কাব্যসুষমা এবং সংহত বাষ্প্রপঞ্চে স্থাপন করেছেন। তাঁর গদ্যভাষ অবিরত অপরিমিত মৌলমেধার সহজাত আভাস। অতঃপর, আবিদের আভাসের ভাষ্যনিচয় আমাদের সম্মিলিত ইতিহাস- সমাজ-সংসারের শিল্পময় গর্ভবাক্য রূপে অভিষিক্ত।
আধুনিক ইতিহাসতত্ত্বের একটি প্রধান প্রতিপাদ্য হল কালের গুপ্ত ও মুখরিত অধ্যায়গুলির বিবরণ প্রত্যক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত করা। আবিদ আত্মবচনফলের ত্বক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে যুগের গতি ও নিস্তব্ধতা, চাঞ্চল্য ও স্থবিরতা, ধর্ম ও দ্রোহ, প্রণয় ও উৎপাত, পীড়ন ও প্রেম তথা নৈকট্যমগ্ন সমকালিক সামাজিক সার্বজনিক পৃষ্ঠদেশসমূহ চিহ্নিত করেছেন। অতএব, আবিদ-অঙ্কিত দৈনন্দিন চিত্রাবলি কিঞ্চিৎ নয়-এ যেন ‘গোস্পদে বিম্বিত যথা অনন্ত আকাশ’।
সালেহ মাহমুদ রিয়াদ