জাতি হিশেবে ইংরেজরা আজ নিজেদের গুজরে যাওয়া ঔপনিবেশিককাল নিয়ে থোড়াই কেয়ার করে। এ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি যতখানি সম্ভব এড়িয়ে চলে। মন্দ কাজের জন্য লজ্জিত হওয়াও কম গৌরবের নয়। কিন্তু সমস্যা হল, ইংরেজরা এ ওসিলায় সচেতনভাবে ঔপনিবেশিকতার কলঙ্কজনক ইতিহাস জগদ্বাসীর দৃষ্টির আড়ালে রাখতে চায়। অথচ আলেকজান্ডার স্বজাতির না-হলেও একই ইংরেজরা ইউরোপিয়ান হিশেবে প্রায় তেইশ বছর পর আজও তাঁর ভারত আক্রমণের গৌরবগাথা প্রচার করে বেড়ায়। কিন্তু ওই একই ভারতবর্ষে মাত্র বাহাত্তর বছর পূর্বের সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণ নিয়ে থাকে খামোশ! তাই দু-একজন বাদে উপনিবেশ নির্মাণের অধিকাংশ নায়কও সময়ের গর্ভে প্রায় হারিয়ে গেছেন। একারণে উপনিবেশ বিষয়ে ‘সিলেট’ থ্যাকারে-সহ ডজনখানেক গ্রন্থের লেখক ফ্রান্সিস বি ব্র্যাডলি বার্টও (১৮৭৪-১৯৬৩) আজ নামগোত্রহীন দশায় পতিত হয়েছেন। যতটুকু জানা যায়, তিনি আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৯৬ সালে ভারতবর্ষে কাজ করতে আসেন। ছিলেন সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টর।
অন্যদিকে, ১৭৬৬ সালে উইলিয়াম ম্যাইকপিস থ্যাকারে কেরানি হিশেবে ভারতবর্ষে আসেন। ১৭৭২ সালে নিযুক্ত হন সিলেটের প্রথম কালেক্টর। এই লোকটির আত্মজীবনীকে কেন্দ্র করে ব্রাডলি বার্ট তাঁর কাহিনি নির্মাণ করেছেন। তবে মূল চরিত্র থ্যাকারে হলেও এতে বর্ণিত হয়েছে পলাশির যুদ্ধ, সন্ন্যাস বিদ্রোহ, এবং বাংলা- বিহার-উড়িষ্যার ‘দেওয়ানিক্ষমতা’ দখলসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ। সাম্রাজ্য স্থাপনে অসংখ্য ব্রিটিশের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং প্রাণবলিদানের মর্মস্পশী কাহিনি। সেকালের ভারতবর্ষ এবং ইংল্যান্ডের ভূগোল, সমাজ, রাজনীতিসহ নানাবিধ বিষয়ের চিত্রও চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
অনুবাদক ভাষারীতি এবং শব্দের যথাযথ প্রয়োগে মূল লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিপ্রায় সুপাঠ্য ভাষায় চিহ্নিত করেছেন। ওরিজিনাল ভাষার লিখনশৈলী উপস্থাপন করতে যাননি, এখানে তাঁর নিজস্ব স্টাইল, টীকাভাষ্যে জ্ঞাতব্য তথ্যটি বুনে দিয়েছেন। এবং ‘অনুবাদকের কথা’ অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ করেছেন।